সবাই ভাবতেছে এরা কারা আসোলে এদের পেছনে লক্ষ
আমার স্মৃতিগুলো অতীতকে জীবন্ত করে বর্তমানকে ভুলিয়ে দিতে চায়। ভালো লাগে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে।
স্মৃতির যে অধ্যায়টি আমার কাছে সবচেয়ে সুখের তা হলো আমার স্কুল জীবন আর শৈশব।
আরো দুবছর আগে স্কুল পার করে এসেছি। তারপরও সেসব স্মৃতি আমার জীবনের অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে। আমার দুরন্ত শৈশব আর স্কুলের কথা মনে পড়লে মাঝে মাঝে মনে হয় কেন বড় হলাম। ছোট থাকাই ভালো ছিল।
আমি পড়তাম শাইলট্টি রাইগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হই। নতুন স্কুলে এসে আমি যেনো এক বড় জগৎ দেখতে পেলাম। প্রথম প্রথম নতুন পরিবেশ অস্বস্তিকর মনে হতো। তবে ধীরে ধীরে সেটা আমার বাড়ির মতো আপন হয়ে উঠল।
আমি বড়দের বরাবর সম্মান করে চলি। আর আমার এই গুণ স্কুলে আমাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিচিত করে ফেলে। এ কারণেই হয়তো স্কুলের সব শিক্ষক আমাকে স্নেহ করতেন। শিক্ষক আর বন্ধুদের স্নেহ- ভালোবাসায় আমার স্কুল জীবন হয়ে উঠেছিল আনন্দের ও গৌরবময়।
স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী উৎসবের আয়োজন ছিল আমার জন্য বেশ আনন্দের। সারাবছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করতাম। সেদিনটা হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ-কোলাহল, আমোদ-কৌতুকে কেটে যেত। এ দিনে বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও নানা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হতো। আমি ভালো ফলের জন্য পুরস্কার না পেলেও ভালো আচরণ ও নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য পুরস্কার পেতাম।
শৈশব আর স্কুলের গল্প করতে গেলে বন্ধুদের কথা আগে বলা দরকার। বন্ধু ছাড়া স্কুল আর শৈশব আমি চিন্তা করতে পারি না বন্ধুগুলোকে আমার অস্তিত্ব মনে হতো। কে বেশি কাছের তা আলাদা করা কঠিন।
তবে একজন আছে যার কথা একটু আলাদা করে লিখতেই হয়। ওর নাম রেদোয়ান। ওর সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুটা হয়েছিল তিক্ততা দিয়ে।
রেদোয়ান সব সময় লুকিয়ে আমার ক্লাসের খাতা ছিঁড়ে ফেলত। ও চাইতো না আমি ওর চেয়ে ভালো ফল করি। কেন এমন করতো জানি না। টের পেয়ে আমিও লুকিয়ে ওর খাতা ছিঁড়ে রাখতাম।
একজন আরেকজনের পেছনে বসে শার্টে কালি লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা তো ডাল ভাত হয়ে গিয়েছিল। এখন এসব কথা মনে হলে হাসি পায় আবার কখনও চোখ ছলছল করে ওঠে।
এমন ঠাণ্ডা যুদ্ধ করতে করতে আমরা কখন ভালো বন্ধু হয়ে গেছি টের পাইনি।
আম্মুর রান্না খিচুড়ি আর ডিম ভাজি ওর বেশ পছন্দ ছিল। কত দিন একসঙ্গে বসে খিচুড়ি আর ডিম ভাজি খেয়েছি তার হিসেব নেই।
এরপর ওরা হুট করে একদিন গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়। সেদিন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আর সেদিনই বুঝেছি ওই আমার একমাত্র কাছের বন্ধু। মাঝে মাঝে যখন ওরা বেড়াতে আসতো তখন খুব আনন্দ হতো আমার। অনেক কথা জমা করে রাখতাম ওকে বলার জন্য।
স্কুল, বন্ধু, শৈশব সবকিছুই আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। সময়ের স্রোত অতীত ফিরিয়ে দেয় না। তাই স্মৃতি হাতড়ে বেঁচে থাকতে হয় জীবনভর।